টুক করে ঘুরে আসি: জয়ী সেতু
জয়ী সেতু
সত্যম ভট্টাচার্য
একটি সেতু কি করে? খুব সহজ করে বললে জুড়ে দেয়। পাহাড়ের সাথে পাহাড়, গ্রামের সাথে গ্রাম, মফস্বলের সাথে মফস্বল জুড়ে গিয়ে যেন এক নতুন দিগন্ত খুলে যায়। বহুবার এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় ঝুলন্ত সেতুতে পায়ে হেঁটে পেরুতে গিয়ে মনে হয়েছে যখন সেতুটি ছিলো না তখন সেদিকের লোকের কি ভাবে যোগাযোগ হত এদিকের সাথে। যা হোক এসকল প্রশ্ন বাতুলতারই নামান্তর। চোখ কান খোলা রাখলে এমন প্রচুর উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই আছে।
এই করোনা কালের আগে কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় হলদিবাড়িগামী একটি বাস ধরতে হত যা সকালবেলা সেখান থেকে ছেড়ে যেতো জেলা শহর কোচবিহারে। মনে পড়ে অন্য সব দিন ফাঁকা থাকলেও সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে গাড়িতে পা দেবার জায়গা থাকতো না। কারন কি? না কারণ হচ্ছে সত্তর কিলোমিটার পেরিয়ে সেদিন ঐ মফস্বলের লোককে যেতে হত পাশের মহকুমা শহর মেখলীগঞ্জে জমি বা অন্যান্য আদালত সংক্রান্ত কাজে। অথচ সেই মহকুমা শহরটি মফস্বল শহরটির থেকে মাত্র একটি নদী তফাতে। নদীর দুই পারে দুটি জায়গা যা সড়কপথে পেরুনোর জন্য উজাতে হত সত্তর কিমি।
সকলের উন্নয়ন মানে যে সকলেরই উন্নয়ন তা কিন্তু বাস্তবে নয়। এবারে করোনাকাল পেরিয়ে স্কুল খুলেছে। একদিন ঐ বাসটিতে উঠে দেখি বিলকুল ফাঁকা । মনে পড়লো আরে এই দিনেই তো আমরা উঠতে পারতাম না ভিড়ের জন্য। জিজ্ঞেস করাতে বাসের লোক বললো- আর বোলো না দাদা, ব্রিজ হয়ে গিয়ে আমাদের ব্যবসা শেষ হয়ে গেলো।
হ্যাঁ, হলদিবাড়ি এখন জুড়ে গিয়েছে তিস্তার অপর পারের মহকুমা শহর মেখলিগঞ্জের সাথে জয়ী ব্রিজ দিয়ে। তাই যে দূরত্ব পেরুতে আগে লোকেদের পাড়ি দিতে হত সত্তর কিমি তা পেরুতে এখন যেতে হচ্ছে মাত্র পনেরো কিমি। তাই হলদিবাড়ির এখন অন্য এক দিগন্ত খুলে গিয়েছে। প্রান্তিক মফস্বল বা ছিটমহলের তকমা ঝেড়ে ফেলে সে এখন জুড়ে গিয়েছে মূল জেলার সাথে। আগে কোচবিহার জেলার হয়েও তাকে সব কাজে নির্ভর করতে হত জলপাইগুড়ির ওপর। সৃষ্টি হত বহুবিধ সমস্যা।
আর সে কারণেই বিখ্যাত হলদিবাড়ির হাট দেখা ছাড়াও হলদিবাড়ি পেরিয়ে জয়ী ব্রিজ দেখতে একদিন যেতেই হয়। কারণ জয়ী ব্রিজ এই মুহূর্তে রাজ্যের দীর্ঘতম ব্রিজ। আবার বলি অনেকে ভাবতে পারেন যেতে তো অনেক ঝামেলা। গাড়ি ভাড়া করতে হবে, প্রোগ্রাম করতে হবে। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে বলছি এত কিছু করতে হবে না।
একটা ছুটির দিন দেখে দুপুরের পর শান্তিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের হলদিবাড়ির বাসে চেপে বসুন। মাত্র ত্রিশ কিমি যেতে যেটুকু সময় লাগে। এবারে হলদিবাড়ি নেমে সেখান থেকে টোটো নিয়ে নিন। মাত্র কিলোমিটার পাঁচেক। ব্রিজ ঘুরে দেখুন। ওপারেই মেখলিগঞ্জ। ফেরার সময় হুজুর সাহেবের মাজার না দেখা থেকলে অবশ্যই সেখানে একবার ঢুঁ মারুন। কারণ মেলার সময় ভিড়ের ভয়ে আমাদের বেশীর ভাগেরই যাওয়া হয়ে ওঠে না এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মেলায়।
আবার কেউ যদি মনে করেন মেখলিগঞ্জ যাবেন অটো ধরে নিন। মেখলিগঞ্জ পৌঁছে সেখান থেকে কিছু একটা ধরে চলে যান তিনবিঘা করিডোর দেখতে। বাংলাদেশের পাটগ্রাম-দহগ্রামের মধ্যে গাড়ি চলছে। এবারে কোন পথে আপনি চলবেন সেটা আপনার বা আপনার সময়ের ব্যাপার। আমি কিন্তু অবশ্যই দ্বিতীয় দলে।
আর একটি কথা। জয়ী ব্রিজ দেখতে গেলে অবশ্যই সাথে ছাতা,জলের বোতল ইত্যাদি রাখুন। কারণ ব্রিজ বানাতে গিয়ে পুরো জায়গাটিই ন্যাড়া হয়ে গিয়েছে। ডিপ ফ্রাই হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। ইচ্ছে করলেই দুই দিকের পৌরসভা বা পঞ্চায়েত কিছু গাছ লাগাতে পারে সৌন্দর্য্যায়নের জন্য। কিন্তু গাছ কাটাতেই এখন সবার লক্ষ্য।
ফোটোঃ লেখক
শেষ লাইনটা
ReplyDeleteসুন্দর লেখা সাথে সচেতনতার বার্তা।
ReplyDelete