ধারাবাহিক উপন্যাস
গোসানী মঙ্গল অবলম্বনে
রঙ্গন রায়
আগে যা ঘটেছিলঃ দেবী চন্ডী শিবের কাছে বর চাইলেন, প্রাগজ্যোতিষপুরের পশ্চিমে অরাজক অংশে আবার সুশাসকের অধীনে রাজত্ব স্থাপিত হোক। সেখানে তিনিই হবেন প্রধান দেবী। স্ত্রী'র প্রতি অনুরাগে শিব বললেন 'তথাস্তু'। জামবাড়ি গ্রামের ধর্মনিষ্ঠ দম্পতি ভক্তিশ্বর ও অঙ্গনা স্বপ্নাদিষ্ট হলেন চন্ডীপুজোর জন্য।
দ্বিতীয় পর্ব
জামবাড়ী গ্রাম, প্রাগজ্যোতিষপুরের পশ্চিম ভাগ
ঊষালগ্ন সদ্য শেষ হয়েছে। আলো ফুটে গেছে বিহানের। দূর শৈলশিখরের কোণ থেকে উঁকি দেওয়া সূর্য এখন প্রকাশ্য। প্রতিটি বৃক্ষে পাখিদের কিচিরমিচির সমগ্র জামবাড়ীর নিদ্রা ভাঙিয়ে দিয়েছে। গ্রাম জেগে যাওয়া মানে কর্মব্যস্ততারও সূত্রপাত।
ইতিমধ্যে গৃহস্থ বাড়ির রমণীরা উঠোন পরিচ্ছন্ন করে, গতরাতের বস্ত্রখণ্ড ত্যাগ করে ফেলেছে। পুরুষেরা কেউ কেউ কর্ষণক্ষেত্রে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। যাদের জীবিকা মৎস আহরণ, তারা জাল, জাখোই প্রভৃতি সাবধানে গুছিয়ে প্রস্তুত। গতরাতের ভেজানো তণ্ডুল সিদ্ধকে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ সহযোগে আহার করেই সকলে বেরিয়ে পড়বে।
এমন সময়ে গ্রামের প্রধান পথ দিয়ে মহা সমারোহে যে দুজনকে হেঁটে আসতে দেখা গেল, তাদেরকে এই অঞ্চলের সকলে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। মহাদেবের উপাসক ভক্তীশ্বর ও তার সুন্দরী পতিব্রতা স্ত্রী অঙ্গনা। হাঁটতে হাঁটতেই ভক্তিশ্বরের গলা শোনা গেল, "আরে তোমরা সবাই কোথায় গো? চল, চল, সকলে একসঙ্গে চল! আজ যে দেবী চণ্ডীর পূজা হবে। এখন থেকে মায়েরও আরাধনা করব আমরা।"
প্রত্যেকে এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। এই জামবাড়ীসহ সমগ্র প্রাগজ্যোতিষ আদি দেবতা শিবের উপাসক। স্বয়ং ভক্তীশ্বর একজন নিষ্ঠাবান শৈব। তাহলে হঠাৎ কী এমন হল?
ভক্তীশ্বরের কন্ঠস্বরে
অধিকাংশ বাড়ি থেকেই নারী পুরুষেরা বেরিয়ে এসেছিল রাস্তায়। তাদের মধ্যে থেকে ভক্তীশ্বরের
বন্ধুস্থানীয় সোমদেব বলল, 'মায়ের আরাধনা করব, এ তো খুবই আনন্দের কথা ভক্তীশ্বর!
কিন্তু হঠাৎ এভাবে শুরু করব বললেই কি করা যায়? তাছাড়া মহাদেবও তো কুপিত হতে পারেন!'
তার বক্তব্যে অন্যান্যরাও সায় দিল। ব্যাপারটা সত্যিই বিবেচনা সাপেক্ষ। পূজাপাঠ করব বললেই করা যায় না। কখন কী অমঙ্গল হয় তার নিশ্চয়তা নেই।
দ্বিধাগ্রস্থ জনতার দিকে তাকিয়ে অঙ্গনা বলল এবার, 'কখনও শুনেছ দুজন মানুষ একই স্বপ্নাদেশ পায়?'
গ্রামবাসীরা বিস্মিত হল, 'তোমরা দুজনে এই পূজার স্বপ্নাদেশ পেয়েছ? তো সেটা আগে বলোনি কেন?'
'জামবাড়ী গ্রামে ভক্তীশ্বরের কথাও যে লোকে সন্দেহের চোখে দেখবে, সেটা ওরা জানত না বলেই হয়তো বলেনি।'
বৃদ্ধ মোড়লও যে এই সকাল বেলায় সকলের সঙ্গে বেরিয়ে আসবেন, তা কেউই ভাবেনি। সবাই চুপ করে মাথা নীচু করল। ছিছি! এ তারা কী করল? একথা তো সত্যিই যে ভক্তীশ্বর জামবাড়ীর একজন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত। তন্ত্র, মন্ত্র, বেদ, রামায়ণ – এসবই তার অধ্যয়ন করা।
সোমদেব দুঃখিত স্বরে জানাল, "ভক্তীশ্বর, আমাদের তুমি ক্ষমা করো বন্ধু! আমরা সত্যিই সকলেই বড় বেশি ভীত হয়ে আছি। মায়ের আরাধনা করবার মতো পবিত্র কর্মেও অমঙ্গলজনক আশঙ্কার সম্ভাবনা ভাবছি।"
'এভাবে বোলো না সোমদেব। তোমাদের কারুরই কোনো দোষ নেই। নতুন মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে স্থাপন করবার কিছু সঙ্গত নিয়ম রয়েছে, যেগুলো না মানলে অমঙ্গল হয়, আমি জানি। তোমরা সেই জায়গা থেকেই ভয় পেয়েছ। অমূলক কিছু নয়। কিন্তু তোমরা তো জানো আমি নিজে একজন পাঁজিয়া (রাজবংশী পণ্ডিত)। কোনও অমঙ্গল জ্ঞানত এই প্রাগজ্যোতিষের হতে দেব না আমি।'
এবার বৃদ্ধ মোড়ল ভীড় থেকে বাইরে এসে সরাসরি ভক্তীশ্বরের দিকে তাকালেন, 'কোথায় কখন মন্দির নির্মাণ করতে হবে বলো। তোমার ওপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে বাবা। তুমি শুধু জানাও।'
ভক্তীশ্বর হাত জোড় করে মোড়লকে প্রণাম জানিয়ে বলল, 'আপনাদের সকলের আশির্বাদ ও ভালোবাসাই যে আমাদের পাথেয়। আমি জানি কেন সকলে নতুন কিছু করতে ভয় পাচ্ছে। আমাদের কোনও রাজা নেই। আমরা অরাজক রাজ্যে বসবাস করি। এরপর যদি আরও কিছু ঘটে, তবে সবাই ধনে প্রাণে শেষ হব। কিন্তু আমি একটা জিনিস জানি আর মানি, যদি সঠিক নিয়ম না জেনেও মাতৃ আরাধনা করা হয়, তবুও কখনওই কোনো অমঙ্গল হতে পারে না। আমরা তো পূজা ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গেই করব। সবচেয়ে বড় বিষয়, মা তাঁর সন্তানদের অমঙ্গল কখনও কামনা করেন?'
সরল গ্রামবাসীরা ভক্তীশ্বরের কথার প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারল এবার। তারা সকলেই লজ্জিত। ভীড় থেকে একজন যুবক বলল, 'চলো সবাই।'
এরপর মহা উৎসাহের সঙ্গে গ্রামের সকলেই নিজ নিজ কর্ম পরিত্যাগ করে বেরিয়ে এল গৃহ ছেড়ে। নারীরা অঙ্গনাকে ঘিরে ধরল স্বপ্নের গল্প শোনবার জন্য।
ভক্তীশ্বর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতেই কয়েকজন যুবক লেগে পড়ল বাঁশ কাটতে। একটি মাটির বেদী নির্মাণ করা হল। চার কোণে চারটি বাঁশ পুঁতে ছাদে দেওয়া হল বেড়ার ছাউনি। মেয়েরা গোবর দিয়ে সম্পূর্ণ অঞ্চলটি শুদ্ধ করে ফেলল। ভক্তীশ্বর বিধিবদ্ধ আচার মেনে স্থাপন করল ঘট। অঙ্গনার নির্দেশে সবাই ইতিমধ্যেই নিয়ে এসেছে জবা, ধুতুরা, বেল, আতা, পদ্ম, অপরাজিতা প্রভৃতি প্রয়োজনীয় পুষ্প। তণ্ডুল, কদলী, দূর্বাঘাস, আমলকী, হরিতকী, পদ্মপত্র যা যা উপাচার, একে একে সব এনে উপস্থিত হল গ্রামবাসীরা। গ্রীষ্মকাল হওয়ায় আম, জাম, শ্রীফল সবই পাওয়া গিয়েছে। সমস্ত দ্রব্য প্রাপ্তিতে আয়োজন সম্পূর্ণ হল। ধূপ, দীপ, মধুপর্ক ও অগুরু চন্দনের সুবাসে আবহাওয়া ম ম করছে। এবার গলায় বসন দিয়ে পূজাপাঠে ভক্তীশ্বরের পাশে বসল অঙ্গনা। অন্যান্য রমণীরাও গলদেশে বস্ত্র দিল।
পূর্ণ ভক্তিতে স্তবন করবার এক অংশে হঠাৎ ঘটল অত্যাশ্চর্য ঘটনা। চতুর্দিকে অপূর্ব সুবাস। সকলে মোহিত হয়ে পড়ল। ভক্তীশ্বর লক্ষ্য করল, ঘটে স্বয়ং দেবী আবির্ভূতা হয়েছেন। হ্যাঁ, একটুও ধন্ধ নেই। সে অনুভব করতে পারছে। তার সমগ্র রোমকূপ রোমাঞ্চিত হয়ে গেছে। নারী পুরুষেরা বাক্যরহিত। শুধু অঙ্গনার দুই নয়নে অশ্রুর ধারা।
ষোড়শোপচারে হয়তো দেবী তুষ্ট হলেন। কারণ ঠিক এই পর্যায়ে এসে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটল। চারিদিকে বয়ে গেল ভীষণ বায়ু। বিহঙ্গের দল নীরবতা পালন করল। দিনমণিও উজ্জ্বলতা হারাল খানিক। আর ঠিক এমন মুহূর্তে, এক অপূর্ব কন্ঠস্বর ভেসে এল আকাশ থেকে–
'তোমাদের পূজা পেয়েছি ভক্তীশ্বর। পুত্র ধন নিয়ে সুখে সংসার করো। তোমাদের সকলের বিপদে আমি রক্ষা করব।'
স্তব্ধতার আবহ রচনা করে দৈববাণী সমাপ্ত হল। প্রতিটি নরনারীর আনখশির বিপুল বিস্ময়ে কম্পিত। তদ্গত ভক্তীশ্বর দেখল, শান্তিপূর্ণ দরিদ্র জামবাড়ী গ্রামের প্রতিটি অধিবাসীর চোখে অশ্রু। যে অশ্রুর কোনও সংজ্ঞা দেওয়া যায় না।
মানস সরোবর, কৈলাস পর্বতের পাদদেশ, তিব্বত
এক খণ্ড নুড়ি পাথর সরোবরের জলে ছুড়ে দিলেন চণ্ডী। 'টুপ' করে ডোবার আগে যে আন্দোলনের বৃত্তাকার রেখার জন্ম দিয়ে গেল পাথরটা, সেই দৃশ্য দেখতে চণ্ডী ভালোবাসেন। তীরের দিকে এসে একে একে ধাক্কা খায় প্রতিটি মৃদুল ঢেউ। আর তাতে করে অস্তগামী সূর্যও কেমন ভেঙেচুরে যায়। মনে হয় দিবাকরের সঙ্গে এ এক শৈশবের ক্রীড়া।
জলে আঙুল ডুবিয়ে নখের কোণে জমা বিন্দু গুলো সখী পদ্মার দিকে ছেটালে পদ্মা রেগে যায়। আজও একই রসিকতা করলেন চণ্ডী। আর পদ্মা চিৎকার করে উঠল, 'তোমার আঙুল গুলো সব পচে যাবে এবার! কতবার বলেছি এরকম করবে না!'
মুখে হাত চাপা দিয়ে বিস্মিত হওয়ার ভঙ্গী করে চণ্ডী বললেন, 'ওমা! তাই নাকি রে পদ্মা! আমার হাত পচে যাবে! ইশ! তাহলে যে আর কাউকেই আমি আশির্বাদ করতে পারব না! অবশ্য কেউই আমাকে ভক্তি করে না! আশির্বাদ দেওয়ার প্রয়োজনও হবে না!'
'বাজে কথা বোলো না তো!' সখীর কথায় মৃদু মুখঝামটা দিল পদ্মা, 'কেন, এই তো সেদিনই তুমি প্রাগজ্যোতিষের পশ্চিম দিকের ঐ গ্রামটায় দেখে এলে, তারা তোমাকে প্রতিষ্ঠা করে পূজাপাঠ শুরু করেছে।'
'সে করেছে। তার আলাদা কারণও আছে।'
পদ্মা কৌতুহলী হল, 'কী কারণ?'
চণ্ডী পদ্মার দিকে তাকালেন। পদ্মা তাঁর আজন্ম বান্ধবী। কত গোপন কথা সে জানে। নিজের মনের কথা গুলো বলবার মতো সঙ্গীর যে ভীষণ অভাব জীবনে, তা তিনি জানেন। এই নির্জন পাহাড়ের গ্রামে ব্যস্ত স্বামীকে সবসময় পাওয়াই যায় না। চণ্ডীর বড় একা লাগে। মনে হয় পাশে কেউ নেই। তাই তো তিনি চান নিজের প্রতিষ্ঠা। তিনিও তবে নিজেকে বিভিন্ন শুভ কর্মে ব্যস্ত রাখতে পারবেন।
'চল, অন্ধকার হয়ে গেছে। এবার গ্রামে ফিরি।'
চণ্ডীর এই কথায় ক্ষুণ্ণ হল পদ্মা, "তাহলে বলবে না কারণটা, তাইতো?"
'আরে বাবা বলব তো! যেতে যেতে বলছি।'
অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য রচনার কাজ দিবাকরের সমাপ্ত হয়েছে। আলো কমে আসছে। মানস সরোবরের ওপর ভেসে থাকা ডিমের কুসুমের মতো মেঘেরা চণ্ডীর প্রিয় সূর্যাস্তের দৃশ্যকে দৃশ্যমান করতে সরে গিয়েছিল, এখন ধূসর অন্ধকারের মতো তারা ফিরে আসছে আবার। হিমেল হাওয়ায় ভরে গেছে দিগন্ত। চণ্ডী পদ্মার আঙুলের ফাঁকে আঙুল ভরে উষ্ণতা বিনিময় করলেন। তারপর হাঁটা শুরু করলেন গ্রামের দিকে।
সারা রাস্তা অবশ্য দুজনের কেউই কোনও কথা বলেনি। পদ্মাও আর জোর করেনি চণ্ডীকে। সে বুঝেছে, চণ্ডী কোনও কারণে বিষণ্ন হয়ে গিয়েছে। সখীকে তো সে আর আজ থেকে চেনে না!
ভদ্র, গ্রামের প্রধান ফটকে পাহারা দিচ্ছিল। সে সবসময়ই সতর্ক থাকে। শিবের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সে অমনোযোগী দুটি সহ পাহারাদারকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। সম্প্রতি শিব নেই। ভারতবর্ষের দক্ষিণের কোনও রাজ্যে গেছেন। কাজেই ভদ্র এখন আরও বেশি সজাগ। চণ্ডীকে আসতে দেখে নতমস্তকে প্রণাম জানাল ভদ্র। তিনি ঘুরে তাকিয়ে দেখলেনও না। পদ্মাকে বললেন, "আমার কক্ষে চল। তোকে অনেক কিছু বলার আছে।"
নিজ গৃহে প্রবেশ করে গবাক্ষ বন্ধ করে প্রদীপ প্রজ্বলন করলেন চণ্ডী। অন্ধকার কেটে সামান্য উজ্জ্বলতা প্রকাশ পেল। এই অন্ধকার ও আলোর রহস্যটি তিনি নিজ হাতে করতে ভালোবাসেন। এর জন্য দাসীকে ডাকবার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এই সান্ধ্যবেলায় বড্ড যন্ত্রণা দেয় মশককূল। হিমালয়ের শৈত্যপ্রবাহের ভেতরও এদের জীবন ভীষণ বেঁচে থাকতে চায়। একজন দাসীকে বললেন ধূপ জ্বালিয়ে যেতে।
ধূপের সুবাসে মনটা কিঞ্চিৎ প্রসন্ন হল। সহচরী পদ্মাকে পাশে বসালেন চণ্ডী। তারপর বললেন, 'কান্তনাথ রাজা হবে জামবাড়ী গ্রামের। প্রাগজ্যোতিষপুরের পশ্চিমে সবচেয়ে সুন্দর, মনোরম রাজ্য হল কোচ রাজ্য। সেখানে কান্তা নামে একটি সুপবিত্র স্থান আছে। আমি সেখানে গিয়েই অবস্থান করব। কান্তনাথই আমার পূজার প্রচার করবে। এভাবেই আমি সম্পূর্ণ বিষয়টা ভেবেছি। ওই এলাকাটি অতীব চমৎকার পদ্মা! কিন্তু ওখানে দীর্ঘদিন কোনো রাজা নেই। ওরা ভীষণ অসুখী। ওদের জন্য কষ্ট হয়। তাই ভেবেছি ওখান থেকেই নিজ কর্ম শুরু করব। মানুষের মঙ্গল কর্ম।'
একটানা বলে চণ্ডী থামলেন। পদ্মা সমস্ত কারণ শ্রবণ করে চমৎকৃত হল। তারপর সামান্য খটকা লাগায় বলল, 'আচ্ছা কান্তনাথ মানে তোমার প্রিয় ভক্ত সেই দ্বাররক্ষী না?'
চণ্ডী উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'হ্যাঁ সেই দ্বারী। ও কিছুদিন প্রধান ফটকের সহ পাহারাদার ছিল। একদিন নিজ কর্মে অমনোযোগী হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য ভদ্র ওকে ভোলার কাছে নিয়ে যায়। ভোলা সাত-পাঁচ না ভেবে শাপ দিয়ে দেয় মর্ত্যে জন্মানোর। সে এখন শাপভ্রষ্ট দ্বারবান। কিন্তু ঐ সময়েই আমার মনে হয়, ওর মাধ্যমেই আমি নিজ কর্ম সাধন করতে পারি। তাই সেদিন ভোলাকে গিয়ে যখন জানালাম, উনি আমাকে বর দিলেন।'
সমগ্র বৃত্তান্ত শুনে পদ্মা বলল এবার, 'কিন্তু ও যদি মর্ত্যে যায় তাহলে তো আর ফেরা হবে না ওর?'
'কেন হবে না? কিছুকাল রাজ্য ভোগ করেই আবার ফিরে আসবে কৈলাসে। তুই তো জানিসই ভোলা আমার পাগলা ভোলা। ও কাউকে রেগে গিয়ে অভিশাপ দিলেও, সেটা খুব বেশি ক্ষতিকর হয় না। তাছাড়া আমি নিজে ওর শাস্তি কমিয়ে দিয়েছি ওঁকে বলে।'
পদ্মা যে সত্যিই তার এই সখীটিকে বড় ভালোবাসে তা এইমাত্র আরও একবার বুঝতে পারল। এর বুক ভরা মায়া আছে। মন ভরা উদারতা আছে। আর প্রাণে আছে ভালোবাসার বীজ।
'আগামী শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া বৃহস্পতি বার পড়ছে। ঐ দিন কান্তনাথ প্রবেশ করবে অঙ্গনার গর্ভে। প্রাগজ্যোতিষপুরের মানুষ পাবে তাঁদের নতুন রাজাকে। রচিত হবে নতুন ইতিহাস। সৃষ্টি হবে নতুন সাম্রাজ্য। ওদের প্রধান দেবী হব আমি। কিন্তু আমার পাশে কে থাকবে? ঈশ্বরেরও তো ঈশ্বর প্রয়োজন বল?'
'কেন তোমার ঈশ্বর তো স্বয়ং মহাদেব।' পদ্মা হেসে বলল।
চণ্ডীর ওষ্ঠেও খেলে গেল সামান্য হাসি। তিনি জানেন শিব আছেন তাঁর পাশে। কিন্তু তারপরও একজনকে প্রয়োজন হয়। স্বামী সেই জায়গাটা সবসময় নিতে পারেন না। এমন সময় হঠাৎ পদ্মা চণ্ডীর হাতে নিজের হাত রাখল।
পদ্মার হাতের স্পর্শে বন্ধুত্বের মধুরতা। বুকের ভেতর যেন বরফ গলতে শুরু করেছে চণ্ডীর। স্বামীকে তিনি ভালোবাসেন। কিন্তু সে যে সময়ই দেন না! এই সখীটিই তাঁর সমগ্র জগৎ। আসলে জীবনে একটা সঠিক বন্ধু থাকলেই বেঁচে থাকাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। বন্ধুর চেয়ে বৃহৎ ঈশ্বর এ পৃথিবীতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ক্রমশঃ
খুব ভালো এগোচ্ছে
ReplyDeleteনতুনত্ব আছে। সুন্দর
ReplyDeleteVlolaglo , opekkhay roilam next part r
ReplyDelete