টাউনলভ্যভোজ্যঃ লিখিনু যে জিলিপিখানিঃ শ্রীমতী ইডলি রসরাজ

 

লিখিনু যে জিলিপিখানি

শ্রীমতি ইডলি রসরাজ


সাধুভাষায় এই হলদে বা ভেজাল না হলে অফ হোয়াইট কালারের আড়াই প্যাঁচের বস্তুটিকে জিলিপি বলা হলেও আমরা এই অঞ্চলে এটিকে জিলাপিই বলে ডেকে থাকি। সে যাই হোক, ডাক তো যে কোন নামেই হতে পারে তা সে ডাকনাম হোক বা ভালোনাম, মোদ্দা কথা হচ্ছে কোন বস্তুটিকে বোঝানো হচ্ছে বা আরো স্পষ্ট করে বললে যেহেতু সেটি  খাদ্যবস্তু তাই তার স্বাদের বিষয়টিই বোঝানো হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে যে এই জিলিপি বা জিলাপি কিন্তু একটি মহা বিষম বস্তু। একে তো এর আড়াই প্যাঁচের কারণে এর একটি দুর্নাম পড়েই আছে। কেন যে কোন জটিল কুটিল লোকের মন বোঝাতে এই অতি সুন্দর ভাজা মিষ্টিটির তুলনা আমরা করি তার কারণ অদ্যাবধি জানা নেই। ছানার জিলিপি বা অমৃতিতেও তো প্যাঁচ থাকে কিন্তু আমরা মানুষের প্যাঁচের সাথে কিন্তু তাদের তুলনা করি না। তাই বলতেই হয় এই বিষয়ে জিলিপির কপাল মন্দ।

আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে কোন শহরে যে এটিকে কখন বানানো হয় তাও একটি গবেষণার বিষয়। অন্য সকল মিষ্টির ক্ষেত্রে শহর থেকে শহরে তবু একটা সামঞ্জস্য থাকে। যেমন ধরা যাক আপনি যদি গরম রসগোল্লা খেতে চান তাহলে যে কোন জায়গাতেই আপনাকে তাক করতে হবে এই সন্ধ্যে ৭টা-৮টা নাগাদ। কিন্তু জিলিপি, উঁহু, তার বেলাতে তা কিছুতেই হবার নয়। 

তখন সদ্য সদ্য মফস্বল থেকে জেলা শহরে এসেছি। তো সেই মফস্বলে আমরা জিলিপি ভাজা দেখতাম সকাল ৯টা-১০টা নাগাদ। প্রতি রোববার সকালে খাবারের শেষে তা খাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এবারে শহরে আসার পর প্রথম রোববার। মনের-পেটের ভেতর থেকে জিলিপি জিলিপি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বেরুলাম জিলিপি খুঁজতে। কিন্তু কোথাও তার দেখা নেই। মন খারাপ হয়ে গেল। এ কেমন জায়গায় এলাম রে বাবা? জিলিপি পাওয়া যায় না। 

ঠিক তখনই এক মিষ্টির দোকান থেকে বললো বিকেলে পাবেন। সারা দুপুর কেটে গেলো অনন্ত প্রতিক্ষার ভেতর। তারপর বিকেল পেরুতে না পেরুতেই উপস্থিত হয়ে দেখলাম সেটি ভাজা হচ্ছে। তখন থেকেই ধরতে পারলাম যে এর প্যাঁচের সাথে আবির্ভাবের সময়টি নিয়েও কিঞ্চিত জটিলতা আছে। আবার অনেক জায়গাতে দেখেছি মানুষ বাসী জিলিপিই কিনছে। তার আবার আরেকরকম স্বাদ।

তাই এত জটিলতার মধ্যে না গিয়ে যখনই একে দেখা যাবে দু চারটে গলাধঃকরণ করে নেওয়াই ভালো। সাধারণত স্বাদ কখোনোই কোন জায়গাতেই খুব একটা খারাপ হয় না।   

 

 সূচিপত্রে যাওয়ার সূত্র

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিশেষ রচনা: শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর 'বাজার সফর সমগ্র'

ধারাবাহিক উপন্যাস

ধারাবাহিক রচনা: ছবিতে নারী এবং নারীর ছবি